জি২০ সম্মেলনের ইতিহাসে এই প্রথমবার তিনটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এই বহুপক্ষীয় সংগঠনের নেতৃত্ব দিবে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। জি২০ সম্মেলনের এজেন্ডা নিরূপণ এবং পরবর্তী বছরে আগের বছরের এজেন্ডার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে যেকোনো বছরের জি২০ সম্মেলনে গতবারের সভাপতি, চলমান বছরের সভাপতি এবং পরবর্তী বছরের সভাপতি- এই তিন রাষ্ট্রই এজেন্ডা নিরূপণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। নেতৃত্বের প্রাধিকার তালিকায় চলমান সভাপতি রাষ্ট্রই এগিয়ে থাকে, যেমনটি এবারের জি২০ সম্মেলনের সভাপতি ভারত- এ বছরের শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডা ও আলোচনা পরিচালকের ভূমিকায় থাকবে। গত বছরের সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে সভাপতিত্বের দায়ভার নিয়ে ভারত সেপ্টেম্বরের ৯-১০ তারিখে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রশংসনীয় প্রস্তুতির আয়োজন করেছে। স্বাস্থ্য, অর্থায়ন, কৃষি, জ্বালানি ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৫০টি বৈঠকের মধ্যে প্রায় ১৯০টিতেই মন্ত্রিপর্যায়ের অংশগ্রহণ হবে।
সভাপতি হিসেবে এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুশাসনের এজেন্ডা নির্ধারণ করবে। নিজ রাষ্ট্রীয় প্রাধিকারের সঙ্গে মিল রেখে আন্তর্জাতিক নীতি প্রভাবিত করার এক সুবর্ণ সুযোগ এটা দিল্লির জন্য। ইতোমধ্যে, ভারত আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি তার প্রতি প্রভাবিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টাও চালিয়েছে। সেটা হলো কাশ্মীর ইস্যুতে। জি২০ সম্মেলনের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক কাশ্মীরে আয়োজন করার মাধ্যমে, কাশ্মীরের প্রতি মোদি সরকারের বৈরী ও সমালোচিত আচরণের সুকৌশলে মোকাবিলা করেছে মোদি সরকার। এখন জি২০-এর শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এবার বৈশ্বিক পর্যায়ে নীতিনির্ধারণের নেতৃত্ব দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে ভারত।
ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বধীন নীতিগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করবে ভারত। ইস্যুগুলো এমনভাবেই বাছাই করা যাতে সেগুলো ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ভারতের সভাপতিত্বে থাকা ব্রিকস্ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) ফোরামে উত্থাপিত ও জোর আলোচিত হয়েছে। ভারত এখন জি২০ ফোরামে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলো, মহামারির জন্য প্রস্তুতি, দুর্নীতি দমন ও সন্ত্রাসবাদ দমন সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগের সংস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি, এসডিজি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও অর্থায়ন আন্তব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা চলমান রেখেছে ভারত। এই ইস্যুগুলো বিমসটেকের মতো অন্যান্য ছোট বহুজাতিক ফোরামে আলোচিত হয়েছে। ভারতের পরবর্তী দুই জি২০ সভাপতি হলো ব্রাজিল এবং এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা। দুজনই ব্রিকসের অন্যতম প্রধান দুই সদস্য। আপাতত ব্রিকসে যোগদানের প্রতি যে পরিমাণ আগ্রহ বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেই বিচারে এ বছর থেকে শুরু করে আগামী দুই বছরই জি২০ ও ব্রিকস্ ফোরামের মধ্যকার ইস্যুগুলোতে মিল দেখা যাবে এটাই স্বাভাবিক। এতে করে উন্নয়শীল রাষ্ট্রগুলোর একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক একতরফা শাসন ও আইনব্যবস্থার সংস্কার ও পরিবর্তনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোতে ন্যায়-অনুপাতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মানদণ্ড ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা সহজ হবে। পশ্চিমাদের একতরফা নিয়মনীতির প্রতি নত হতে হবে না সবাইকে। উদীয়মান বাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নে সাম্যতা বজায় রাখতে সমঅধিকার নিয়ে কথা বলা যাবে।
সর্বোপরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক জটিলতা, চীন ও ভারতের মধ্যকার টানাপোড়েন, উপরোল্লিখিত বিষয়াদিও প্রাধিকার হ্রাস করতে সক্ষম। তবে ভারত এখনো সেরকমটা হতে দেয়নি। শীর্ষ সম্মেলনেও সেই ধারাবাহিকতা থাকবে, এমনটা সবাই নিশ্চিত করতে না পারলেও, তেমনটাই আশা করছে। এর আগেও জি২০ সম্মেলনের মূল আলোচনা সন্ত্রাসী আক্রমণ (ব্রাসেলসে ২০১৫), কোভিডের কারণে জি২০ সম্মেলন তার মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বালি সম্মেলনে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন যোগদান করেননি। আর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়া তার নেতৃত্বের সুবাদে ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে একটি ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সক্ষম হয়েছিল। ভারতের বর্ধমান ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও গুরুত্বের কারণে এ বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করা হবে বলে পণ্ডিতদের মতামত। ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব ভূরাজনৈতিক প্রাধিকার ও পরিবর্ধিত জাতীয় স্বার্থের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো জোর পদক্ষেপ জোরালো ঘোষণাপত্র আনয়নে ভারত কতটা আগ্রহী হবে, কিংবা পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিবে, এসবই মোদি সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতার পরীক্ষণ হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দেয়ার অভিলাষ রাখা ভারত শুধু বাংলাদেশকে জি২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ এবং ব্যাপক সুযোগের উদ্রেক করবে। পরবর্তী পর্বে সেগুলো নিয়ে আলো বিস্তর আলোচনা করব। তবে ভারত তার প্রতিবেশী আর কাউকেই এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানো, চীন ও পাকিস্তানের মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন, সেই টানাপোড়েন সমাধান না করার প্রতি অনমনীয় অবস্থান এবং ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ভূরাজনৈতিক আসরে, স্বয়ং প্রথম স্বয়ং প্রধান- আচরণের দরুণ অনেকেরই ভারতের প্রতি, বিশেষ করে মোদির বিজেপি সরকারে আস্থা রাখা কঠিন।
ভারত তার সভাপতিত্বে আয়োজিত জি২০ সম্মেলনে সদস্য নয় এমন ৯টি রাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে- মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস্, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার শুধু একটি রাষ্ট্র, বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভারতের সঙ্গে তাদের সমসাময়িক সম্পর্কের কথা বিবেচনায়, এই অনামন্ত্রণে অবাক হওয়ার যেমন কিছু নেই, তেমনি বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় জি২০-এর এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হওয়া ব্যাপক সুবিধা ও সম্ভাবনার সঞ্চার করেছে।
বৈশ্বিক ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে এশিয়াকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে। বিশ্ব অর্থনীতির উৎকর্ষের পথ এশিয়ার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাবে। ভারত ও বাংলাদেশ এশিয়ার বর্ধমান অর্থনীতির অন্যতম। ভূকৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। তাই বাংলাদেশ যে এশিয়া ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনসংখ্যার বিচারে এশিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সব সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে বাংলাদেশের। আমন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে সম্মেলন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়োজন ও বৈঠকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছেন। আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করবেন। জি২০ ফোরামে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনার পাশাপাশি বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সুযোগও পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা ও সেগুলো অগ্রসরের সুযোগ হবে তার।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জি২০ সম্মেলনের সহযোগিতায় নিজের অবদান রাখতে কার্পণ্য করেনি। সমন্বিত ও টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ছয়টি প্রস্তাবনা দিয়েছে জি২০ ফোরামে, যার প্রত্যেকটিই জি২০-এর গতবারের, এ বছরের এবং খুব সম্ভব আগামী অন্তত তিন বছরের এজেন্ডায় গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে। প্রস্তাবনার প্রত্যেকটিই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মতো সব রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। এসডিজির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের প্রতি বাংলাদেশ জোর দিয়েছে যাতে সব রাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি সমরূপে নিশ্চিত করা যায়। এলডিসি পর্যায় উত্তরণ করা ও জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার রাষ্ট্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন সহযোগিতা প্রণয়নের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সাম্যতা সৃষ্টির আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড মহামারি বিবেচনায় বাংলাদেশ সমতাপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রণয়নের কথাও বিশেষভাবে ব্যক্ত করেছে। জি২০ ফোরাম টেকসই ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্বারোপ করছে আর টেকসই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে জি২০ ফোরামে কার্যকরী প্রচেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া এনার্জি ট্রানজিশন ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে।
জি২০ সম্মেলনের যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে তার প্রত্যেকটিই বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগানোর সঠিক প্রয়াস করেছে বাংলাদেশ। তবে এই প্রয়াস কার্যকর রূপে পরিণত হবে কি না সেটা নির্ভর করবে পরবর্তী পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর। এসব বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সুযোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারকে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করা। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই এ বিষয়ে দাতাদেশগুলোর আগ্রহ হ্রাস হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। এখন সেটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে। অনুদান ও সহযোগিতা অর্থের কমতি এখন দৃষ্টিকটু পর্যায় অবনত হয়েছে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইডলাইনে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মতো আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা জরুরি।
তা ছাড়া জ্বালানি ও আর্থিক খাতে বাংলাদেশ আপাতত কিছুটা কঠিন সময় পার করছে। এই দুই ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সহায়তা সংগ্রহ করা বাংলাদেশের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠারও উদ্রেক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য জি২০ ফোরামে রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে কথা বলে সেই উদ্বেগ সমাধানের এক বিশেষ সুযোগ থাকবে।
তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা-সম্পর্ক জোরদার করার এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুযোগের বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। যাতে করে বাংলাদেশ প্রশাসন সেই লক্ষ্যে আসন্ন বছরগুলোতে কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে পারে। কৃষি, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রপ্তানি, বৈশ্বিক অর্থায়ন ব্যবস্থা ও জ্বালানি বিষয়ে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রয়াস শুরু করেছে। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্ভাব্য অংশীদারদের জন্য আস্থার সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই আস্থা টেকসই রূপে ফিরে পাওয়া অপরিহার্য। নতুবা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে, আর আসন্ন এলডিসি উত্তরণে পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা শঙ্কাজনক হয়ে উঠবে।
জি২০ ফোরামে বিশ্বের সব সমস্যা সমাধানের আশা করা ঠিক হবে না। তবে গত এক দশকে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উৎকর্ষে জি২০ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ব যখন অতিকায় মেরুকরণ প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে সময় বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থাকে আরও সমতা ও সামগ্রিক প্রতিনিধিত্বপূর্ণ করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। আমন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এক কার্যকরী বৈশ্বিক ফোরামে নিজ ও নিজের মতো রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারবে। এতে করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যায়ে তার মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলা এবং হতে চাওয়ার রাষ্ট্রগুলোর জন্য এক কার্যকরী প্রদায়কে পরিণত হবে। এলডিসি রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একসময় কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। এখন সেই ভূমিকাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। জি২০-এর মাধ্যমে সেটা করতে পারে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ এশিয়ার হাতেই ন্যস্ত। ভারত আর চীন এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই এগিয়ে। তবে এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রকৃত বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশ ও এর মতো অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সঠিক ও সামগ্রিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর বৈশ্বিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক উত্থানের মাধ্যমেই শুধু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সাম্যতা প্রণয়ন সম্ভব।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ডিজিটাল সময়।