কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংবর্ধনা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা

digitalsomoy

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

শনিবার হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিল অটোয়ার হিল্টন গার্ডেন হোটেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হাইকমিশন। পবিত্র রমজান মাসের কারণে ২৬ মার্চের পরিবর্তে ১৮ এপ্রিল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদীয় সচিব রবার্ট অলিফ্যান্ট দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে কানাডার সিনেটর, সংসদ সদস্য, অটোয়ায় কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রধান এবং বাংলাদেশি-কানাডিয়ানসহ ১৫০ জনের বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

উদ্বোধনী বক্তব্যের শুরুতে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা-বোনদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

হাইকমিশনার তার বক্তব্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং কানাডার মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি উভয় দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানদের অবদানের প্রশংসা করেন। 

হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন।

ড. খলিলুর রহমান হাইকমিশনার হিসেবে তার গত সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য মাইলফলকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা ও টরন্টোর মধ্যে সরাসরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু করতে পারায় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যে গতিশীলতা এসেছে। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ কর্তৃক কানাডাকে বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে কারিগরি দিকগুলো আলোচনা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক বাণিজ্য প্রতিনিধির নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন ঢাকা সফরকে তিনি স্বাগত জানান। 

হাইকমিশনার আশা প্রকাশ করেন, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সংলাপের মাধ্যমে কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত খুনি নুর চৌধুরীকে ডিপোর্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত দিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করতে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রবার্ট অলিফ্যান্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কানাডার সমর্থন এবং পরবর্তীকালে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের সফল উত্তরণের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মডেল হিসেবে কাজ করছে। 

রবার্ট অলিফ্যান্ট মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে মানবিক কারণে অস্থায়ী আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত-আইসিজেসহ অন্যান্য ফোরামে কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি কানাডার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের অবদানের কথাও স্বীকার করেন। বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ককে শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করতে হাইকমিশনারের মেয়াদকালে বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য তিনি তাকে ধন্যবাদ জানান।

 

অন্যদের মধ্যে কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের (সিবিপিএফজি) চেয়ারপারসনসহ সংসদ সদস্য ও সিনেটররা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ করার আশা প্রকাশ করেন। তারা হাইকমিশনারকে তার মেয়াদকালে পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপকে সহায়তা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

পরে অতিথিদের সম্মানে হাইকমিশন কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।