বর্তমানে আমাদের দেশে নির্বাচন ও সংস্কারকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে : দেবপ্রিয়

digitalsomoy

বর্তমানে আমাদের দেশে নির্বাচন ও সংস্কারকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে : দেবপ্রিয়

 

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ‘মন্থর সংস্কার’ 

 

ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫:

 

বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র বিষয়ক কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সতর্ক করে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত না করলে বাংলাদেশে সংস্কারপন্থী মনোভাবের গুরুত্ব কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এর মানে হলো, যারা এখন এক পর্যায়ে সংস্কারের পক্ষে তারা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কার থেকে সরে আসতে পারেন।’

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট'  শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ড. দেবপ্রিয়।

তিনি প্রবৃদ্ধির প্রবণতা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক সুরক্ষা মোকাবিলার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'বর্তমানে আমাদের দেশে নির্বাচন ও সংস্কারকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।’

ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের অভাব এবং কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জকে জরুরি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে আসন্ন বাজেট নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার আহ্বান জানান তিনি। ‘বিশেষ করে প্রবৃদ্ধির হার ধীর হয়ে পড়ছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সমস্যা বিদ্যমান।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক ইশতেহার উপস্থাপন না করায় নোবেল বিজয়ী  সমালোচনা করেন ড. দেবপ্রিয়।

তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, একটি সমন্বিত নীতি কাঠামোর এই অভাব মূল্যায়ন করা কঠিন করে তুলেছে। প্রশাসনের গৃহীত বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপগুলো স্বীকার করার পাশাপাশি তিনি একটি সুষম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার ঘাটতিকেও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের মতো বিষয়গুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে এবং পিছিয়ে পড়াদের মধ্যমেয়াদি সহায়তা দেবে সে বিষয়েও আমাদের স্পষ্টতা প্রয়োজন।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত বাজেটের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকার সংশোধিত বাজেট পেশ না করায় আগের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সূচক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’

উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে স্বচ্ছতার অভাবেরও সমালোচনা করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘এসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার জন্য দৃশ্যমাণ নীতিমালা না থাকলে এগুলোর প্রভাব ও সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।’

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নকারী কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট' শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমরা বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে, কীভাবে অবিবেচনাপ্রসূতভাবে মূল্য সংযোজন কর বাড়ানো হলো।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো বলেন, কোনো দেশে সরকার যদি কার্যকরভাবে কর আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষ কর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা আমরা দেখছি না।’

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় বলেন, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কর দিতে ব্যর্থ হন, তাদের জন্য কোনো কৌশল প্রস্তাব করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ প্রত্যক্ষ কর বাদ দিয়ে প্রথমে পরোক্ষ করের দিকে ঝুঁকবেন। বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’

/unb news