বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার আহ্বান বাক্কোর

digitalsomoy

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) ২০২১-২২ অর্থবছরে অবহেলার শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পেশ করার পর এক আলোচনায় খাতটির উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্টরা এক প্রতিক্রিয়ায় এমন কথা জানান।

‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’ শিরোনামে ৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৬ কোটি ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন।

করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দ্বিতীয় বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে বাক্কো। সংগঠনটির দাবি, করোনার সময় বিপিও খাতও সমানতালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে।

দেশে এখন ৬০ হাজার তরুণ-তরুণী বিপিও খাতে কাজ করছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করে এই খাত দিয়েই এক বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে খাতটি অবহেলার শিকার হয়েছে। তাই আগামী বাজেটে খাতটির জন্য কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছে বাক্কো।

আইসিটি খাতের অন্যতম হলেও বিপিওতে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ আরেকটি শিল্প তখনই আউটসোর্সিং এ আকৃষ্ট হবে যখন সে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। কিন্তু এই অপার সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে এই ধরনের কোন উদ্যোগ এই বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি বলে প্রতিক্রিয়ায় জানায় বাক্কো।

সামগ্রিক বিপিও শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাক্কো প্রকাশিত বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিল যার আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। আরও কিছু বিষয় এই বাজেটের অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরি বলে মনে করছে বাক্কো। বাক্কোর বাজেট সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া নিম্নে ব্যক্ত করা হলো-

বিপিও খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর পাঁচ শতাংশ হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর অব্যহতি দিতে হবে। এই কর অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব বাক্কোর পক্ষ থেকে জানানো হলেও বাজেটে আমলে নেয়া হয়নি।

বিপিও শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা ও উন্নয়নে কনসালটেন্সি সার্ভিস, অডিট ও অ্যাভাইজরি এবং সম্মানি খাতের ওপর বিদ্যমান উৎসে মূল্য সংযোজন কর শিথিল করতে হবে। যা বাজেটে উপেক্ষিত।

আইটি ও আইটিইএস পরিষেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রি কেনায় মূল্য সংযোজন কর এবং উৎসকর থেকে অব্যাহতি প্রদান করার বিষয়টিও বাজেটে বিবেচনা করা হয়নি।

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বিপিও শিল্পে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সহজ শর্তে ঋণ ও সেন্টার অব এক্সিলেন্স গড়ে তুলতে ৩০০ কোটি টাকার তহবিল রাখার প্রস্তাব করলেও তা বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানায় বাক্কো।

আইটি-আইটিইএস শিল্পকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিলেও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিপিও শিল্প তার সুফল পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। এই সুবিধা ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির আবেদ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বাজেটে।

এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে যে ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট নিতে হয়, তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। সে ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আবেদনের সুযোগ করে দেয়া ও এক মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট দিতে এবং একই সঙ্গে ৪ বছর মেয়াদি (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৪) পর্যন্ত ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট ইস্যু করার প্রস্তাব বিবেচনায় আনা হয়নি বাজেটে।

বাক্কোর নেতারা জানান, আগামী বাজেট অধিবেশনে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হলে এবং বিপিও খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করার সুযোগ হবে।