যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনে তারা বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন: অর্থমন্ত্রী

digitalsomoy

যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনে তারা বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন-বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, হুন্ডির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে আমরা প্রবাসীদের সুফলটা বলছি। রেমিট্যান্স আমাদের অন্যতম একটি খাত। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের পরে রেমিট্যান্স অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে। এটি আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

হুন্ডিতে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় অফিসিয়াল চ্যানেলে বিদেশ থেকে টাকা আসুক সেটা প্রত্যাশা করি। কারণ এটার যে সুফল সেটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। হুন্ডির মাধ্যমে যদি টাকা নিয়ে আসেন সেটিকে অবৈধ বলব না, সেটি কালো টাকা। যারা সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে আসেন, তারা সবসময় বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সবসময় প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে বলেন। এগুলো তাদের টাকা, পরে তারা যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনলে প্রশ্ন উঠবে তারা টাকা কোথায় পেলো।

হুন্ডিতে কী পরিমাণ টাকা আসে সেটির কোনো পরিসংখ্যান আছে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার এই মুহূর্তে কোনো ধারনা নেই। আমি আগে একটি স্টাডি করে দেখেছিলাম, অফিসিয়াল চ্যানেলে এসেছে ৫১ শতাংশ আর হুন্ডিতে এসেছে ৪৯ শতাংশ। সেজন্য আমি মনে করি সেই ধারাবাহিকতা এখনো আছে।

মূল্যস্ফীতি বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেই সেসময় মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিলো ১২.৩ শতাংশ। সেই কতো বছর আগে এটি ছিলো। এরমাঝে অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়েছি, আমাদের এখানে যে পেন্ডামিক মোকাবেলা করেছি সুন্দরভাবে মোকাবেলা করেছি। সারাবিশ্বে প্রসংশিত হয়েছি এটি সুন্দরভাবে করার জন্য। এখন আমরা ইউক্রেণ-রাশিয়ার যুদ্ধ মোকাবেলা করছি। এটিও আমরা সুন্দরভাবে মোকাবেলা করব। আরো মাসখানেক এখানে প্রতিফলন দেখতে পারব। এখন ইম্পোর্ট করে যা নিয়ে আনছি সেগুলো দেশে পৌঁছালে সঙ্গত কারণে অন্যান্য জিনিসের দামও কমবে। খাদ্য দ্রব্যের বাইরের জিনিসের দামও কমে আসবে। ডলারের দামও কমে আসবে। মূল্যস্ফীতি এখন ৭ শতাংশ মাত্র। ভোজ্য তেল বা অন্যান্য যেসব জিনিস তাদের থেকে কিনতে হয়, তাদের যদি দাম বাড়ে সেই প্রভাব এখানেও পড়ে। আমাদের বেশিদামে কিনে আনতে হচ্ছে বলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। 

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই উদ্যোগটি দেশের মানুষ গ্রহন করবে। আমার অনুরোধ থাকবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকে, আগামি প্রজন্মের জন্য দায়বদ্ধতা থেকে সবাইকে আরো উদ্দিপনা দিয়ে তাদের আরো ভালোভাবে বুঝে যেন এটি করেন। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা আছে সেটি এই স্কিমের আওতায় এনে স্থায়ীভাবে আগামি প্রজন্মের জন্য এটি করা উচিত।

দুর্ণীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কতোটা দুর্নীতি কতোটা হয় সেই তথ্য আমার কাছে নাই। আপনাদের কারো কাছে নাই, কিন্তু হয়ত অনুমান করে বলতে পারেন যে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি যে হচ্ছে না সেটি নয়, নাহলে আমাদের এক্সপোর্ট যদি ইম্পোর্টের চেয়ে বেশি না হয় তাহলে আমরা এক্সপোর্ট করব কেন। এ প্রশ্নটা এসে যায়। আমরা সব সময় আশা করি রফতানি বাণিজ্য আমদানির চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম কিছুদিন ধরে এ কাজটি হচ্ছে। এখানে একটা আরেকটিকে ব্যালেন্স করে। সঠিকভাবে এগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। যে মানুষগুলো শ্রম দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে তাদের স্বপ্ন একটাই আগামি প্রজন্ম লাভবান হবে এবং তারা একটি বিশুদ্ধ স্বপ্ন দেখবে। সেজন্য তারা যা পাচ্ছে দেশে পাঠাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে ভীষণ ক্রাইসিসি হয়েছিলো, সেসময় মূল্যস্ফীতি বেড়েছিলো। এখন আমাদের সবসময় রিজার্ভ মেইনটেইন করতে হয়। যদি একটু বাড়ে কমে তাহলে সমস্যা নাই। তিনমাসের থাকা উচিত এটি আইএমএফের চাহিদা। সেসময় আমাদের ছিলো মাসে গড়ে ৭৫.৮ বিলিয়ন ডলার, তিনমাসে দরকার ছিলো ২.৪ বিলিয়ন ডলার। সেসময় সেটি কিন্তু ছিলো। সেসময় এটি কমার কারণে সরকারকে ৫৬ আইটেমের এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়েছিলো, সেটা সব দেশই করে।